বিশ্বজুড়ে যখন তিনভাগের একভাগ মানুষ(৭৮ কোটির বেশি) অভুক্ত থাকছে তখন প্রতিদিন ১০০ কোটি জনের এক বেলার খাবার (মিল)নষ্ট হচ্ছে। জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থার নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত বুধবার প্রকাশিত‘খাদ্য অপচয় সূচক রিপোর্ট-২০২৪’আরও বলছে,মোট খাবারের পাঁচভাগের একভাগ ফেলেই দেওয়া হয়। খাদ্য পরিষেবা,পারিবারিক স্তরসহ নানা খাতে যে পরিমাণ খাবার নষ্ট হয় তা আহারযোগ্য মোট খাবারের ১৯ শতাংশ।
জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইনগার অ্যান্ডারসেন বলেন,খাদ্য অপচয় হলো বৈশিক ট্র্যাজেডি। লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে থাকছে অথচ বিশ্বজুড়ে নষ্ট হচ্ছে খাবার। চলমান এই বিষয়টি শুধু বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে না,একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন,জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং দূষণকেও বাড়িয়ে তোলে।
অপচয় হওয়া খাবারের বেশিরভাগ আসে বাসাবাড়ি থেকে,যা মোট নষ্ট হওয়া খাবারের ৬০ ভাগ।অংকের হিসাবে এই পরিমাণ ৬৩ কোটি টনের বেশি। এ ছাড়া ১৩ কোটি টনের বেশি খাবার অপচয়ের জন্য দায়ী খাদ্য পরিষেবাসহ হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো।
রিপোর্টে বলা হয়েছে,গড়ে প্রতিবছর একজন ৭৯ কিলোগ্রাম খাবার নষ্ট করে,যা বিশ্বের প্রত্যেকের জন্য প্রায় ১.৩টি মিলের সমান।
শুধু‘ধনী দেশের’সমস্যা নয়:
২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে করা গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য অপচয় শুধু ধনী দেশগুলোতে সীমাবদ্ধ নয়। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ধনী-গরিব দেশগুলোর মধ্যে খাদ্য অপচয়ের পার্থক্য কমে এসেছে।
উচ্চ, মধ্য এবং নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে পারিবারিক স্তরে নষ্ট হওয়া খাবারের গড় পার্থক্য (বছর প্রতি) মাথাপিছু মাত্র সাত কিলোগ্রাম। তবে শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে অপচয়ের ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায়।
মধ্য আয়ের দেশে, খাবারের পুনর্ব্যবহারের কারণে গ্রামে সাধারণত খাবারের অপচয় কম হয়। শহরাঞ্চলে খাদ্য অপচয় কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
অপচয় এবং জলবায়ু পরিবর্তন
গড় তাপমাত্রা ও খাদ্য অপচয়ের মধ্যে সরসারি সম্পর্ক রয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। উষ্ণ দেশগুলোর বাসাবাড়িতে মাথাপিছু খাবার বেশি অপচয় হয়। এর পেছনে তাজা খাবার গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি এবং খাদ্য সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থার অভাবকে মূলত দায়ী করা হয়েছে।
উচ্চ মৌসুমি তাপ, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ এবং খরা খাদ্য অপচয় কিংবা নষ্ট হওয়া রোধের পথে বড় অন্তরায়। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু খাদ্য হ্রাস এবং অপচয় বৈশ্বিক গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনের ৮ থেকে ১০ ভাগ উৎপন্ন করে, যা এভিয়েশন খাতের (বিমান চলাচল) তুলনায় প্রায় পাঁচগুণ, সেহেতু খাদ্যবর্জ্য থেকে নির্গমন কমানো জরুরি।
এত নেতিবাচক তথ্যে মধ্যে আশাবাদের খবরও এসেছে প্রতিবেদনটিতে। এতে বলা হয়েছে, খাদ্য অপচয়, জলবায়ুর ওপর প্রভাব ও পানি সংকট নিরসনে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব গ্রহণ করা যেতে পারে। এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে জাপান ও যুক্তরাজ্যে যথাক্রমে ১৮ ও ৩১ শতাংশ খাবরের অপচয় কমেছে। খাবার বণ্টন সুষ্ঠুভাবে করা গেলে এই পরিবর্তন আনা সম্ভব।
আন্তর্জাতিক শূন্য অপচয় দিবস সামনে রেখে যুক্তরাজ্যের একটি এনজিওর সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
সূত্র: জাতিসংঘ