ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করার অভিযোগ তুলে সদ্য ঘোষিত উলিপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির পদ থেকে চার নেতা পদত্যাগ করেছেন। কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে ফ্যাসিষ্ট ও আওয়ামীলীগের দোসর জাতীয় পার্টির লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগ করেন উলিপুরের চার নেতা। আজ শুক্রবার দুপুরে পৌর শহরের হাজি মার্কেটের একটি কক্ষে (অস্থায়ী কার্যালয়ে) এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সদ্য ঘোষিত উপজেলা কমিটির ৪ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আমিনুল ইসলাম ফুলু। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, উপজেলা বিএনপির কমিটিতে তারিক আবু আলা চৌধুরীকে আহ্বায়ক করা হয়েছে, তিনি বিগত দিনে রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন না। বিগত দিনে তারিক চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হলেও গাঁ-বাচার স্বার্থে আওয়ামী লীগের লোককে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে তার ওপর সমস্ত দায়িত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ ছাড়া বর্তমান
আহ্বয়ক মেয়র থাকাকালীন জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে ভোট প্রদানসহ তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান উলিপুর উপজেলা বিএনপির ১৮ নম্বর সদস্য সহিদুল ইসলাম জাতীয় পার্টির ও ফ্যাসিষ্ট মামলার আসামি। এছাড়া ১৬ নম্বর সদস্য সাইফুল ইসলাম বাদল আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থীদের পক্ষে বিভিন্ন সময় ভোট প্রার্থনা করেছেন। পৌর বিএনপির ১৭ নম্বর সদস্য রফিকুল ইসলাম বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মার্কার প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেছিলেন।
এভাবে অর্থের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদী ও আওয়ামীলীগ সমর্থিত এবং জাপার কর্মীদের পদ পদবি বন্টন করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে সদ্য ঘোষিত উপজেলা ও পৌর কমিটি বাতিল করে পুর্ণরায় ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে কমিটি প্রদানের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ মহাসচিবের দৃষ্টি কামনা করছি আমরা।’সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা বিএনপির ৪ নম্বর আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম ফুলু, পৌর বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক নুরে সাবা স্টার, ৯ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মোতলেবুর রহমান মঞ্জু ও ১৩ নম্বর সদস্য আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগকারী পৌর বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক নুরে সাবা স্টার উপস্থিত ছিলেন না তবে তিনি মুঠোফোনে পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে সদ্য ঘোষিত উলিপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তারিক আবু আলা চৌধুরী বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। বিগত দিনে আমি পৌর বিএনপির সভাপতি, পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি পদে ছিলাম। উলিপুরের মানুষ জানে দীর্ঘদিন ধরে কারা বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। জেলা কমিটি ত্যাগীদের মূল্যায়ন করেছেন। কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ জানান, বিগত দিনে বিএনপির পদে থেকে অত্যাচারিত হয়ে আন্দোলন সংগ্রামে যারা নেতৃত্বে দিয়েছেন বর্তমানে তাদেরকেই মূল্যায়ন করা হয়েছে। যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারেনি তারাই বির্তক সৃষ্টি করছে। এছাড়া যাকে জাতীয় পার্টির নেতা বলা হয়েছে উনি বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, এখনো পদত্যাগের কোনো পত্র হাতে পাইনি। যারা যোগ্য তাদেরকেই নেতৃত্বে আনা হয়েছে।
অর্থের বিনিময়ে কমিটি দেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা বলেছে তাদেরকেই বিষয়টি প্রমাণ করতে হবে। উলিপুরে বিবদমান দুইটি গ্রুপ রয়েছে। মান অভিমান থাকবেই।
উল্লেখ্য, গত বুধবার কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি উলিপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। এতে সাবেক মেয়র তারিক আবুল আলা চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হায়দার আলী মিয়াকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা কমিটি এবং নুর মোহাম্মদকে আহ্বায়ক ও সোলায়মান আলী সরকারকে সদস্য সচিব করে ২৫ সদস্যর পৌর কমিটি ঘোষণা করা হয়।