সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম। ফাইল ছবি
মারজান চৌধুরী
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলামের কক্ষ থেকে ২৫ কোটি টাকা লুট হওয়া নিয়ে খোদ পুলিশেই তোলপাড় চলছে। গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নগদ ‘প্রণোদনা’ হিসেবে এই অর্থ এনেছিলেন মনিরুল। কিন্তু সেই অর্থ বিতরণ করার আগেই ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। ওইদিন থেকেই অফিসে যান না মনিরুল। কিন্তু তার কক্ষে ২৫ কোটি টাকা নগদ থাকার তথ্য জানতেন এসবি ও পুলিশের কয়েক কর্মকর্তা। তারা ৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী ৬ দিন এসবি কার্যালয়ের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, ইন্টারনেট ও ডিশ লাইন বন্ধ রাখেন। মনিরুলের কক্ষে প্রথমে তালা দিয়ে পরে তালা ভেঙে ওই অর্থ লুট করেন। এই প্রক্রিয়ায় একজন ডিআইজি ও একজন এডিশনাল ডিআইজি সরাসরি জড়িত বলে নিশ্চিত হয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এই ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের একজন ডিআইজির নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে পুলিশের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। বর্তমান এসবি প্রধান শাহ আলমের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বাংলার সীমান্তকে বলেন, ‘এই বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া আমার এখতিয়ারে পড়ে না। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। এসবির পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জানান,পুলিশ সদর দপ্তরের একজন ডিআইজিকে বিষয়টি তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে এসবি ও ডিএমপির কর্মকর্তারা সদস্য হিসেবে আছেন। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি কমপক্ষে তিনজন কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করেছে। তাদের মধ্যে সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি, ঢাকা মহানগর পুলিশের বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া ডিআইজিও রয়েছেন। এসবি সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন যখন তুঙ্গে- ওই সময় আন্দোলন দমন-পীড়নের কাজে প্রণোদনা ও খরচ হিসেবে ৪ আগস্ট শেখ হাসিনার কাছ থেকে ২৫ কোটি টাকা নেন মনিরুল। পুরো টাকাই তার অফিস কক্ষে রাখা ছিল। ৫ আগস্ট থেকে মনিরুল অফিসে যাননি। বিশেষ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (অর্থ) এবং এসবি প্রধানের স্টাফ অফিসার পুরো বিষয়টি অবগত ছিলেন। তারা বিষয়টি জানান বিশেষ শাখার অতিরিক্ত ডিআইজিকে (প্রশাসন ও অর্থ)। পরে তিনজন মিলে পুরো অর্থ লুট করে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অর্থ লুটের সময় তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট’ আছে উল্লেখ করে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরপরই এসবি প্রধানের অফিস কক্ষ, তারা বেইলি রোডের বাসা এবং সিটি এসবি অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। ৬ আগস্ট কৌশলে এসবি কার্যালয়ের সকল সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করা হয়। কেটে দেওয়া হয় ইন্টারনেট ও ডিশ লাইন। ৬ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এসবি প্রধানের কক্ষ থেকে পুরো অর্থ বের করে নেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ আসার পর তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বিসিএস ১৫ ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। তিনি শেখ হাসিনা সরকারের আমলে পুলিশে সবচেয়ে প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের একজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গত ১৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তার আগের দিন মনিরুলকে এসবি প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি শাহ আলমকে এখন এসবি প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।