ঢাকা ০২:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যে ২০০ একর জমির ফসল নষ্ট

  • ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট সময় ০৭:৩৬:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
  • ১৭৭ বার পড়া হয়েছে

কক্সবাজারের কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যের কারণে এভাবেই নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি।


রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যের কারণে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে শত শত একর কৃষিজমি। ক্যাম্পসংলগ্ন খাল, ছড়া ও নালাগুলো ভরাট হয়ে গেছে দূষিত বর্জ্যে। ক্যাম্প থেকে নির্গত বর্জ্যের বিষাক্ত পানিতে নষ্ট হচ্ছে জমি-ফসল। সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতে বর্জ্য ছড়িয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকায় কমপক্ষে ২০০ একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সংসদীয় আসনের সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন মাছকারিয়া (স্থানীয়ভাবে পরিচিত মাছকাইজ্যা) বিলে আমাদের পূর্বপুরুষদেরও জমি রয়েছে। বর্ষার পর শীত মৌসুমজুড়েও আমরা মাছ ধরতাম এই বিলে। কিন্তু রোহিঙ্গা বর্জ্যে এখন ধান শেষ, মাছও শেষ।

তিনি বলেন, শুধু ধান নয়, বিলটি মাছের জন্যও একদা বিখ্যাত ছিল।

এ জন্য স্থানীয়দের কাছে এটি মাছকাইজ্যা নামে পরিচিত। বিলটিতে কমপক্ষে ৪০০ একর ফসলি জমি রয়েছে। সারা বছরই পানি থাকত বিলে। রোহিঙ্গা বর্জ্যের কারণে সেই ঐতিহ্যবাহী বিল এখন ভরাট হয়ে গেছে। শাহজাহান চৌধুরী আরো বলেন, সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই স্থানীয়দের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক কয়েক দফা বৃষ্টিপাতের সময় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকায় কমপক্ষে ২০০ একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

শুধু তা-ই নয়, দুর্গন্ধের কারণে ক্যাম্পসংলগ্ন রাস্তাঘাট দিয়ে যাতায়াতও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় কৃষক রিদুয়ানুল হক বলেন, এই বিলের জমিতে চাষ করা ধানেই তাঁর পরিবারের সারা বছরের খোরাক হয়ে যেত। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপনের পর থেকে এলাকাবাসীর জন্য দুর্ভোগ-দুর্দশা নেমে এসেছে।

এখন সেখানে ধান পাওয়া তো দূরের কথা, দুর্গন্ধের কারণে বিলের জমিতে যাওয়াই যায় না।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, এলাকার বাসিন্দারা বেশ দুর্ভোগে রয়েছে, এটা সত্য। কুতুপালং ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকায় যে নালাটি রয়েছে, সেটি সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংস্কার করার পর পরই স্বল্প সময়ে ফের তা ভরাট হয়ে যায়।’

কুতুপালং এলাকার কৃষক মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, দুই একর জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বর্জ্যে। আমরা খুবই অসহায়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও এখন তার খেসারত দিতে হচ্ছে।

আরেক কৃষক ফরিদ আলম বলেন, গত আট বছরে জমিতে চাষ করতে পারছি না। কেউ কোনো ধরনের সহায়তাও দেয়নি। খুবই কষ্টে আছি।

স্থানীয় তেলিপাড়া গ্রামের জেলে জাফর আলম বলেন, যে খালে মাছ ধরতাম, তা এখন নালায় পরিণত হয়েছে। মাছ নেই, পানি বিষাক্ত।

রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, উখিয়া-টেকনাফে ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে। এসব ক্যাম্পের বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে জমিতে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিবছর বৃষ্টি নামলেই কৃষকদের জমি ডুবে যায় বর্জ্যে। চাষাবাদ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যের কারণে প্রতিবছর কৃষিজমির পরিমাণ এবং কৃষিজ পণ্যের উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, টেকনাফ উপজেলায় ২০১৫ সালে আবাদি জমি ছিল ১৩ হাজার ৭২৮ হেক্টর, যা ২০২৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৩৬ হেক্টরে। একই সময়ে উখিয়ায় ১৬ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমি কমে ১৬ হাজার হেক্টরে নেমেছে।

সূত্র : কালের কন্ঠ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যে ২০০ একর জমির ফসল নষ্ট

আপডেট সময় ০৭:৩৬:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫

কক্সবাজারের কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যের কারণে এভাবেই নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি।


রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যের কারণে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে শত শত একর কৃষিজমি। ক্যাম্পসংলগ্ন খাল, ছড়া ও নালাগুলো ভরাট হয়ে গেছে দূষিত বর্জ্যে। ক্যাম্প থেকে নির্গত বর্জ্যের বিষাক্ত পানিতে নষ্ট হচ্ছে জমি-ফসল। সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতে বর্জ্য ছড়িয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকায় কমপক্ষে ২০০ একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সংসদীয় আসনের সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন মাছকারিয়া (স্থানীয়ভাবে পরিচিত মাছকাইজ্যা) বিলে আমাদের পূর্বপুরুষদেরও জমি রয়েছে। বর্ষার পর শীত মৌসুমজুড়েও আমরা মাছ ধরতাম এই বিলে। কিন্তু রোহিঙ্গা বর্জ্যে এখন ধান শেষ, মাছও শেষ।

তিনি বলেন, শুধু ধান নয়, বিলটি মাছের জন্যও একদা বিখ্যাত ছিল।

এ জন্য স্থানীয়দের কাছে এটি মাছকাইজ্যা নামে পরিচিত। বিলটিতে কমপক্ষে ৪০০ একর ফসলি জমি রয়েছে। সারা বছরই পানি থাকত বিলে। রোহিঙ্গা বর্জ্যের কারণে সেই ঐতিহ্যবাহী বিল এখন ভরাট হয়ে গেছে। শাহজাহান চৌধুরী আরো বলেন, সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই স্থানীয়দের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক কয়েক দফা বৃষ্টিপাতের সময় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকায় কমপক্ষে ২০০ একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

শুধু তা-ই নয়, দুর্গন্ধের কারণে ক্যাম্পসংলগ্ন রাস্তাঘাট দিয়ে যাতায়াতও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় কৃষক রিদুয়ানুল হক বলেন, এই বিলের জমিতে চাষ করা ধানেই তাঁর পরিবারের সারা বছরের খোরাক হয়ে যেত। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপনের পর থেকে এলাকাবাসীর জন্য দুর্ভোগ-দুর্দশা নেমে এসেছে।

এখন সেখানে ধান পাওয়া তো দূরের কথা, দুর্গন্ধের কারণে বিলের জমিতে যাওয়াই যায় না।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, এলাকার বাসিন্দারা বেশ দুর্ভোগে রয়েছে, এটা সত্য। কুতুপালং ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকায় যে নালাটি রয়েছে, সেটি সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংস্কার করার পর পরই স্বল্প সময়ে ফের তা ভরাট হয়ে যায়।’

কুতুপালং এলাকার কৃষক মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, দুই একর জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বর্জ্যে। আমরা খুবই অসহায়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও এখন তার খেসারত দিতে হচ্ছে।

আরেক কৃষক ফরিদ আলম বলেন, গত আট বছরে জমিতে চাষ করতে পারছি না। কেউ কোনো ধরনের সহায়তাও দেয়নি। খুবই কষ্টে আছি।

স্থানীয় তেলিপাড়া গ্রামের জেলে জাফর আলম বলেন, যে খালে মাছ ধরতাম, তা এখন নালায় পরিণত হয়েছে। মাছ নেই, পানি বিষাক্ত।

রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, উখিয়া-টেকনাফে ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে। এসব ক্যাম্পের বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে জমিতে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিবছর বৃষ্টি নামলেই কৃষকদের জমি ডুবে যায় বর্জ্যে। চাষাবাদ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যের কারণে প্রতিবছর কৃষিজমির পরিমাণ এবং কৃষিজ পণ্যের উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, টেকনাফ উপজেলায় ২০১৫ সালে আবাদি জমি ছিল ১৩ হাজার ৭২৮ হেক্টর, যা ২০২৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৩৬ হেক্টরে। একই সময়ে উখিয়ায় ১৬ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমি কমে ১৬ হাজার হেক্টরে নেমেছে।

সূত্র : কালের কন্ঠ