ফাইল ছবি
গাজায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর টানা হামলায় প্রাণহানি বাড়ছেই। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৭৬ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ২৯৮ জন ফিলিস্তিনি। বুধবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যার পর গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এর ফলে গত প্রায় দুই বছরে ইসরায়েলি অভিযানে গাজার মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৮৯৫ জনে। আহত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯২৭ জন। নিহতদের মধ্যে ৬৬ জন সরাসরি ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি ও গোলার আঘাতে প্রাণ হারান। অন্যদিকে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন আরও ১০ জন, যাদের মধ্যে ২ জন শিশু।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কেবল বুধবারের পরই অপুষ্টিজনিত কারণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩১৩ জন। এদের মধ্যে শিশু রয়েছে ১১৯ জন।
এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় খাদ্য ও ত্রাণ সংগ্রহ করতে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। গত ২৪ ঘণ্টায় এমন ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১০৬ জন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ৭৬ জনের মরদেহ ও ২৯৮ জন আহতকে আনা হয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। অনেকেই এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা আছেন, যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও জনবল ঘাটতির কারণে।’
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, সোমবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৭৪৪ এবং আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯ জন।
গাজার মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে গত ২৭ মে থেকে। ওই দিন ত্রাণ সংগ্রহে আসা সাধারণ ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। তারপর থেকে নিয়মিত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ২ হাজার ১৫৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৮৪৩ জনেরও বেশি।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতরে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় গাজা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন হামাস। তাদের নির্বিচার গুলিতে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর জবাব দিতে এবং জিম্মিদের উদ্ধারের লক্ষ্যে ওই দিনই গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। ১৫ মাসেরও বেশি সময় টানা যুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে বাধ্য হয় ইসরায়েল।
তবে এখনও হামাসের হাতে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন জিম্মি জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইডিএফ জানিয়েছে, সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করা হবে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একাধিকবার ইসরায়েলকে অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত গাজায় অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি